ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪ , ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

মগড়া নদীর দুই পাড় ময়লার ভাগাড়

দেশবার্তা

আমাদের বার্তা,  নেত্রকোণা

প্রকাশিত: ০০:০০, ১৫ মে ২০২৩

সর্বশেষ

মগড়া নদীর দুই পাড় ময়লার ভাগাড়

নেত্রকোণা পৌরসভা এলাকায় মগড়া নদী ময়লা আবর্জনা ও কচুরিপানায় ভরে গেছে। হঠাৎ দেখলে মনে হবে নদী নয়, যেন ময়লার ভাগাড়। দখল আর দূষণে আবর্জনায় নিস্প্রাণ হয়ে পড়েছে শহরের ঐতিহ্যবাহী মগড়া নদী। নদীর পুরো অংশ জুড়ে ময়লা ও বর্জ্য ফেলে পানি প্রবাহ প্রায় বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। দিন দিন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই মগড়া নদীটি। দখল, দূষণ আর খননের অভাবে নদীটি হারাতে যাচ্ছে তার চিরাচরিত ঐতিহ্য। বছরে পর বছর উজান থেকে আসা পলি জমে আর স্থানীয় দখলদারদের কারণে নদীটিতে নাব্যতা সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে শুকনো মৌসুমে নদীটিতে পানি থাকে না। পানি না থাকায় বেশ বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। বর্তমানে নদীতে জোয়ার-ভাটার আগমন নেই তবে ভরা বর্ষায় পানি থাকলেও ময়লা আবর্জনা এবং অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা নিচু ব্রিজের কারণে কোনো নৌকা বা ট্রলার চলাচল করতে পারে না। নদীটি খনন না করা আর প্রশাসনের নজরদারির অভাবে দখল-দূষণের কারণে ঐতিহ্যবাহী এই নদীটি এখন ময়লা ফেলার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। 
সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর পাড়ের এক শ্রেণির মানুষ নদীতে ময়লা বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষণ করছে। কচুরিপানায় ভরে যাচ্ছে। কনোন প্রকার নিয়ম-নীতি মানছেন না ওই নদীর পাড়ের মানুষগুলো। নদীর দুই পাড়ে বিভিন্ন স্থানে দখলের মহোৎসবে মেতে উঠেছে দখলদারর া। নদীটির বিভিন্ন স্থানে গতিপথ বন্ধ করে শত শত অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এতে করে নদী দিয়ে পানি যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে বেশ কয়েক বছর ধরে নদীটি কৃষকদের তেমন কোনো উপকারে আসছে না। নদীটি দখল মুক্ত করে খনন করে সচলের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক ও সচেতন মহল। 
এদিকে স্থানীয়রা জানান, আগে এ নদীতে বড়-বড় আইড়, বাইম মাছ ধর পড়তো। কৃষক ও বেপারিরা নদীতে নৌকা বোঝাই করে ধান ও পাট নিয়ে হাট-বাজারে বিক্রি করতো। আর এখন এই নদী খনন ও দখলের কারণে মরার পথে। মগড়া নদীর মরণদশা নিয়ে এমন আক্ষেপ নদীর দুই পাড়ের অনেক মানুষের মুখেই শোনা গেছে। ছোট বাজার এলাকার এক বাসিন্দা এই প্রতিনিধিকে বলেন, আমরা অপারক হয়ে মগড়া নদীর পানি ব্যবহার করি। গোসলের পর শরীর চুলকায়। পোলাপানের অসুখ-বিসুখও ছাড়ে না। শহরের মোক্তারপাড়া এলাকার বাসিন্দা আছিম উদ্দিন এই প্রতিনিধিকে বলেন, অনেক বাসা-বাড়ির পায়খানার পাইপ লাগানো এই মগড়া নদীতে। পানি মুখে লওয়া তো দূরের কথা। কাছে গেলেই দুর্গগ্ধে আমাদের বমি আসে।  
এদিকে খাল-বিল ও হাওরবেষ্টিত নেত্রকোণার একটি অন্যতম নদীর নাম মগড়া। নদীটি নেত্রকোনা পৌরসভা পেঁচিয়ে রয়েছে। এক সময় এ নদীর উত্তাল তরঙ্গ ভরা যৌবন ছিল। নদীর বুক চিরে চলতো পাল তোলা নৌকা। এই নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল নেত্রকোণা শহর। প্রসার ঘটেছিল জেলার ব্যবসা-বাণিজ্য ও সভ্যতা। নৌকায় লোকজন যাতায়াতসহ কৃষকের উৎপাদিত পণ্যও বিক্রির জন্য বড় মোকামে নিয়ে যেতো এই নদী পথে। দুই পাড়ের বাসিন্দাদের গোসল, গৃহস্থালির কাজ চলতো এই নদীর পানি দিয়ে। এখন দখলে-দূষণে মগড়া আজ মৃতপ্রায়।

নেত্রকোনা শহরের বুক ছিঁড়ে দক্ষিণ-পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত এই নদীটি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। নদীর তীরে অবৈধভাবে দখল করা জায়গায় গড়ে উঠছে বাসা-বাড়িসহ নানা স্থাপনা। মোক্তারপাড়া, ছোট বাজার, নাগড়া এলাকায় বাসা-বাড়ির পয়ঃনিষ্কাশনের শতাধিক পাইপ নদীতে দেওয়া। ময়লা আর কচুরিপনায় ভরা নদী। মালনী ইসলামপুর এলাকায় নদীর তলায় জমে থাকা পানি ময়লা-আবর্জনায় নীল হয়ে গেছে। দূষণ আর দখলের কারণে নদীর অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। তবে, আশার কথা হলো নেত্রকোণা শহর অংশে নদীর সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকা খননের জন্য একটি প্রাক্কলন পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড নেত্রকোণা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান বলেন, মগড়া নদী খননের জন্য একটি প্রাক্কলন তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছেএটি অনুমোদন হলেই খনন কাজ শুরু করা যাবে। নদীটি খনন করলে আগের মতো শহরের পরিবেশ আরো সুন্দর হবে।

জনপ্রিয়